প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এক ধরনের মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য হল তালমিছরি। তালের রস একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জাল দিয়ে এই তালমিছরি তৈরি করা হয়।
তালমিছরির কথা উঠলেই চলে আসে দুলাল চন্দ্র ভড়ের নাম। দুলাল চন্দ্র ভড়ের তাল মিছরি ১৯১৭ সাল থেকে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বাজারে চলছে। প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয় বলে তালমিছরিকে “ন্যাচারাল সুগারও” বালা হয়ে থাকে। খাঁটি তালের রস দিয়ে তালমিছরি তৈরি করা হয় যা অনেক উপকারী গুণ সমৃদ্ধ। সাধারণ সর্দি কাশিতে হোক বা আয়ুর্বেদিক ঔষধি তৈরির ক্ষেত্রে, নানাভাবে তালমিছরি ব্যবহার হয়ে আসছে বহু আগে থেকেই। তালমিছরিতে খুব কম পরিমাণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) থাকায় রক্তের সুগারের ওপর খুব কম প্রভাব পড়ে। জানলে অবাক হবেন,তালমিছরিতে আছে প্রচুর পরিমাণে এসেনশিয়াল ভিটামিনস, মিনারেলস, ক্যালশিয়াম,পট্যাশিয়াম,আইরন,জিঙ্ক,ফসফরাসের মতো উপকারি উপাদান।
তালমিছরির স্বাস্থ্যে গুণাগুণঃ
*তালমিছরি হাড় ও দাঁত শক্ত করে।
*সর্দি-কাশি উপশম করতে সাহায্য করে।
*রক্তে হিমোগ্লোবিন লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
*তালমিছরি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
*এটি হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
*ডায়েবিটিস প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
*মস্তিস্কের বিকাশের ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য তালমিছরি খুবই উপকারী।
*যাদের অ্যানিমিয়ার সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য তালমিছরি খুবই উপকারী। কারণ এর মধ্যে থাকা আয়রন শরীরে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
তালমিছরি এর উপকারিতা ::
*এনিমিয়া দূর করে : তালমিছরিতে প্রচুর পরিমান আয়রন থাকার দরুণ এটা এনিমিয়াতে ভীষণ ভাবে কাজে দেয়। এটি নিদ্রাহীনতা দূর করে.. বিশেষত মেয়েদের জন্য তালমিছরি খুব উপকারী। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
*হাড়ের সমস্যা সমাধান : প্রচুর পরিমাণ ক্যালশিয়াম আর পটাশিয়াম থাকার কারণে তালমিছরি হাড় ও দাঁত শক্ত করে ও হাড়ের সমস্যা দূর করে।মেয়েদের মেনোপজের পরে হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে এবং হাড় ভাঙ্গার সমস্যা একটি দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্ষয় রোধ করতে নিয়মিত তালমিছরি সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়। এই দুটি কারণের জন্য বাচ্চাদের জন্যও তালমিছরি খুব উপকারী।
*সর্দি কাশির উপশম : তালমিছরির রস কাশি উপশম করতে সাহায্য করে এবং গলায় শ্লেষ্মা নরম করে দেয়, ফলে গলায় খুসখুসানি কমে যায়। এক টুকরো তালমিছরি মুখে নিয়ে খেলে সর্দিতে এবং কাশিতে আরাম পাওয়া যায়। খুব ছোট বাচ্চাদের জন্য ওষুধ না ব্যবহার করে তালমিছরির প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। এটি ঠান্ডা লাগাও প্রতিরোধ করে। কাশতে কাশতে গলায় ব্যথা হলে এক টুকরো তালমিছরি গোলমরিচ আর ঘি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে এক চামচ খেলে গলা ব্যাথায় উপকার মেলে। এক চামচ তালমিছরি,গোলমরিচ এবং আমন্ড-এর পেস্ট রোজ রাতে গরম দুধের সাথে খেলে নাকের শ্লেষ্মা বের করে দেয় এবং ঠান্ডা লাগা প্রতিহত করে।
*কন্সটিপেশন দূর করে : তালমিছরিতে ডায়েটারি ফাইবারের প্রাচুর্যের জন্য এটি হজমে সাহায্য করে এবং কন্সটিপেশান সারিয়ে তোলে। এছাড়াও,চিনি বা মধুর তুলনায় তালমিছরি আমাদের শরীরে অনেক কম পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট তৈরি করে,ফলে তালমিছরি সেবনে ক্লান্তি অনেক কম হয়, শরীরকে সতেজ রাখে।
*ব্লাড সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রনে রাখে: তালমিছরি একেবারেই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি মিষ্টি। তাই এতে কোন ক্ষতিকর উপাদান নেই। এবং এতে খুব কম পরিমাণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স(GI) আছে। যেটার মাত্রা বেশি থাকলে ব্লাড সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। এটা সাধারণ খাবারে 55% এর কম থাকলে তাকে কম পরিমাণ হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু তালমিছরিতে আছে মাত্র 35%। তাই এটি আপনার মিষ্টির চাহিদা পূরণ করার সাথে সাথে ব্লাড সুগার লেভেলকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই নিশ্চিন্তে এটি খেতে পারেন।